করোনায় দেশে বাড়ছে অভাব, ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে ৩৭.১৪ শতাংশ মানুষ।
দেশে প্রায় দেড় বছর যাবত চলছে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ।
এই মহামারি পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন মানুষের আয় কমে গেছে, অন্যদিকে খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মানুষের খাদ্য অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলেছে।
সম্প্রতি এক জরিপ থেকে জানা যায়, দেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে।
৩৭ শতাংশের বেশি মানুষ এখন বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ করে সংসার চালাচ্ছে।
‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও খাদ্যগ্রহণে প্রভাব’ শীর্ষক এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
জরিপটি করেছে ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
গতকাল ২২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ওয়েবিনারের মাধ্যমে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
গত ২৫ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৭০টি পরিবারের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ছোট পরিবার (চারজন) ২৯টি, মাঝারি (পাঁচ-সাতজন) ৩৭টি ও বড় পরিবার (সাতজনের বেশি) চারটি। আয় বিবেচনায় নিম্ন আয়ের (আট হাজার টাকার নিচের) ৪০টি, মধ্যম আয়ের (আট হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা) ২৬টি এবং উচ্চ আয়ের (১৬ হাজার টাকার বেশি) চারটি পরিবার। এলাকা হিসেবে ঢাকার ৪১টি, দিনাজপুরের ছয়টি, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও ময়মনসিংহের পাঁচটি করে এবং সিরাজগঞ্জের তিনটি পরিবারের মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়।
জরিপে বলা হয়, চালের বাজারে সিন্ডিকেট না থাকলেও বড় চালকলের মালিকরা যে পরিমাণ চাল মজুদ করতে পারেন, তা বাজার অস্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখে; যা ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ হতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ছয় দফা সুপারিশ করে বলা হয়েছে, দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
জরিপের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। আয়োজকদের পক্ষে বক্তব্য দেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন। সম্মাননীয় আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা ও দক্ষিণ এশিয়া ইকো কো-অপারেশন কর্মসূচির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। সঞ্চালনা করেন খাদ্য অধিকার বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী।
জরিপের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ৬৫.৭১ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। ৩৭.১৪ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে খাদ্যসহ দৈনন্দিন চাহিদা মেটাচ্ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, হকারসহ নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাম্প্রতিক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, যা দরিদ্র মানুষের জন্য বাড়তি ও অসহনীয় চাপ তৈরি করেছে।
এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যে ছয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়, সেগুলো হলো :
১. খাদ্য নিরাপত্তাকে সব নাগরিকের অধিকার হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে; ২. খোলাবাজারে চাল বিক্রি বাড়াতে হবে; ৩. আগামী এক বছরের জন্য এলাকাভিত্তিক কয়েকটি স্থায়ী খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির জন্য দোকান/স্টোর তৈরি করা যেতে পারে; ৪. ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বিক্রি সক্ষমতা বাড়াতে হবে; ৫. সমাজের ধনী ব্যক্তিদের আতঙ্কের কেনাকাটা পরিহার করতে হবে ৬. স্থানীয় পর্যায়ে মুদি দোকানগুলোর মজুদব্যবস্থা নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, যেসব মানুষ দারিদ্র্যঝুঁকিতে রয়েছে, তাদের ভোগান্তি লাঘবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম দেখা যায় না। সে জন্য দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কমিশন গঠন করা দরকার। এই কমিশন গবেষণার আলোকে সুপারিশ তুলে ধরবে এবং বাজার মনিটরিংয়ে ভূমিকা রাখবে।
news bangla souurse